Sunday, August 02, 2015

বাঘ গুনতেই বাঘের সর্বনাশ

হোসেন সোহেল॥
প্রাকৃতিক বিস্ময় সুন্দরবনে কদিন আগে বেশ ঘটা করেই গণনা করা হয়েছে বাঘের সংখ্যা। বেশ ভালো কথা। ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশেরই জাতীয় পশুটির প্রকৃত সংখ্যাটা বর্তমানে ঠিক কত তা জানা প্রয়োজন। কিন্তু তারপরও কেন প্রশ্ন উঠছে এই বাঘ গণনা নিয়ে?

এবার সুন্দরবনের বাঘ গণনায় ব্যবহার করা হয়েছে ‘ক্যামেরা ট্র্যাপিং’ বা ফাঁদ পেতে ছবি তোলা পদ্ধতি। এর আগে সর্বশেষ ২০০৪-০৫ সালে পাগ-মার্ক বা পায়ের ছাপ পদ্ধতিতে এই বাঘশুমারি করা হয়েছিল। সে পদ্ধতিতে নাকি ত্রুটি থাকায় এবার আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, বন বিভাগের লোকজনের ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতি নিয়ে। জানা গেছে, অল্প সময়ে বেশি কাজ আদায়ের জন্য সুন্দরবনে না কি বাঘকে আকৃষ্ট করতে বেটিং করা হচ্ছে।

এখানে বেটিং এর মানে হলো টোপ দেওয়া। অথবা খাবারের লোভ দেখিয়ে কোনও পশুপাখির ছবি তোলা বা পশুকে পাখিদের হাতের নাগালে আনার চেষ্টা করা। অনেক সময় বনে বিভিন্ন জন্তুকে হাতের নাগালে পাওয়ার জন্য শিকারীরা জীবন্ত কোনও প্রাণী বেঁধে রাখেন বা কোনও গন্ধ হয়ে যাওয়া পচা প্রাণীর মৃতদেহ ব্যবহার করেন।

বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং নিরাপত্তা আইন ২০১২ অনুসারে সংরক্ষিত প্রাকৃতিক বনাঞ্চলে থাকা বন্যপ্রাণীদের জন্য কোনও ধরনের টোপ বিশেষ করে গৃহপালিত জীবজন্তু টোপ হিসেবে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিষেধ। কারণ এর মাধ্যমে বনের প্রাণীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাকসহ নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে চরম হুমকির মুখে পড়তে পারে বন্য প্রাণীর সংখ্যা। কিন্তু তারপরও আইন লঙ্ঘন করেই চালানো হয়েছে এই বেটিং।

কীভাবে কাজ করে ক্যামেরা ট্র্যাপিং:
বর্তমানে ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়। এ পদ্ধতিতে কোনও মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্যপ্রাণীদের ছবি পাওয়া যায়। বন্যপ্রাণী চলাচলের রাস্তায় দীর্ঘ মেয়াদের ব্যাটারিচালিত ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। এরপর মানুষহীন এ ক্যামেরার সামনে যে নড়াচড়া করবে তখনই উঠতে থাকবে একের পর এক ছবি। এভাবে গবেষকরা পাচ্ছেন দিন বা রাতের আঁধারে লুকিয়ে থাকা বন্যপ্রাণীদের চারিত্রিক বৈশিষ্টসহ নতুন সব তথ্য।

বনবিভাগের অক্কেলহীন কর্মকাণ্ডের দলিল
সুন্দরবনে বাঘজরিপের ছাগলকে টোপ বানানো হয়েছে। বেশ কদিন ধরে এমন কথা কানে আসছিল। কিন্তু স্পষ্ট উৎস খুজে পাচ্ছিলাম না। সুন্দরবনের বাঘ ছাগলের যে গল্প কানে এসেছে আমার কাছে এর গুরুত্ব অবশ্য আলাদা। এর আগেও এমন কর্মকাণ্ডের নজির আছে। বাঘ ছাগলের কানাকানির খবরের অস্বচ্ছতা নিয়ে মাস দুয়েক কেটে গেল।

২০১৪ সেপ্টেম্বর মাস। একটি ফোন। ওপাশের একজন বললেন, সুন্দরবনের ভেতরে ছাগলকে টোপ বানিয়ে বাঘের জরিপ করা হচ্ছে সন্ধান করে দেখুন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিটি বনবিভাগে কর্মরত আছেন। তাই বিশ্বাসের পাল্লা খানিকটা ভারি হলো। সে সাথে একটু বিপদেও ফেলে দিলেন তিনি। কারণ এর বেশি আমাকে কিছুই বললেন না। যাইহোক মাস দুয়েক আগে কানের পাশে কানাকানি তাহলে ভুল ছিল না।

বনকর্তার ফোনালাপের আরও চারদিন পর একজন বন্যপ্রাণী চিত্রগ্রাহক জানালেন আরও কিছু। তার বক্তব্য আরও ভয়ঙ্কর। সুন্দরবনের ভেতরে একটি নয় প্রায় ৫০টি ছাগলকে বেটিং করে বা টোপ বানিয়ে বাঘজরিপ চলছে। এমন কথা শুনে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম।  সুন্দরবন শুধু সংরক্ষিত বন নয় বরং নানা বৈচিত্র্যময় প্রজাতির একটি জীবন্ত গবেষণাগার। ২০১২ সালে সংশোধিত বন্যপ্রাণী আইন তো বটে পুরো বিশ্বে বাঘের অভয়ারণ্যে বাস্তুসংস্থানের ব্যাঘাত ঘটিয়ে গৃহপালিত জীবজন্তু প্রবেশ করানো আইনবহির্ভূত কাজ। কারণ সুন্দরবনের বিচরণ করা প্রতিটি প্রাণী খাদ্যশৃঙ্খলে একে অপরের সহযোগিতায় বেঁচে থাকে। যেখানে মানব সভ্যতার কোনওরকম হস্তক্ষেপ প্রয়োজন পড়ে না। তাই মানুষের গৃহপালিত প্রাণী সুন্দরবনে প্রবেশ করালে শুধু সুন্দরবনের নয় যেকোনও বন্যপরিবেশ বিপর্যয়ে পড়তে পারে।

অন্যদিকে বাঘের টোপ যখন ছাগল তখন জানার খাতিরে অনেক প্রাণীবিদদের সঙ্গে কথা হলো। এক্ষেত্রে তাদের বক্তব্য স্পষ্ট, পৃথিবীতে কোনও বিজ্ঞানে বলা নেই যেখানে বুনো বাস্তুসংস্থান চক্র বা সংরক্ষিত বনে কোনও গৃহপালিত পশুপাখি প্রবেশ করানো হয়। এটি প্রকৃতি বিরুদ্ধ আচরণ এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রকৃতির ধ্বংসের একটি পায়তারা।

সময় গড়িয়ে যায়, বিষয়টি সত্যি যদি হয় তাহলে এটি পৃথিবীতে নজিরবিহীন একটি ঘটনা। সাংবাদিকতার খাতিরে এটি জানা আছে যে, এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলবে না। এরপরও জরিপের বিস্তারিত তথ্য বাঘের স্বার্থেই জানতে হবে এবং সবাইকে জানাতে হবে। তাই পিছিয়ে থাকলে চলবে কেন!

উপরে বলেছি, বনবিভাগের যে ব্যক্তি আমাকে ফোনে জানিয়েছিলেন, আবার ফোন দিলাম তাকে। যদিও শর্ত ছিল তার সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে কথা বলা যাবে না। গতি না পেয়ে শর্ত ভেঙে তার কাছে এবার জানতে চাইলাম জরিপের কাজে নিয়োজিত ছাগল সরবরাহকারী কে।

ঢাকা থেকে ছাগল বিক্রেতা ফোন দিয়ে প্রায় ৫০টি ছাগল কেনার কথা বলি। এরপর নানান কথায় জানতে পারলাম সে খুলনা বন অফিসে ছোট পদে চাকরি করে। সে ছাগল বিক্রেতা নয় বনকর্তার নির্দেশে সে ছাগল সংগ্রহ করেছিল। তবে এতো ছাগল সরবরাহের কথায় সে প্রতিটি ছাগল ২৫০০ টাকা করে দেবে বলে জানালো। যদিও তিনি বিক্রেতা নয়। আরও জানালো ছাগল সংগ্রহে তার সময় লাগবে, কারণ বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাগলগুলো সংগ্রহ করতে হবে। কথার ছলে তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম- বনবিভাগ কী কারণে ছাগল নিয়েছিল এবং সংখ্যা ঠিক কত। সে এসব কথার উত্তর দিতে চাইল না। আমি আর চাপাচাপিতে না গিয়ে বরং তার সঙ্গে খুলনায় দেখা করার তারিখ ঠিক করলাম।

আলতাফের মুখোমুখি:  ছাগল কেনার গল্প
ঢাকা থেকে খুলনা কয়রা বন অফিসের সামনে। বয়স চল্লিশেরও বেশি। তার নাম আলতাফ। লুঙ্গি পরে নির্দিষ্ট একটি চায়ের দোকানে এলো। কিছু সময় নিল আমাদের পর্যবেক্ষণ করতে। আমার পরিচয় তার কাছে ছাগল ক্রেতা হিসেবে।

যাইহোক, আলতাফের সঙ্গে কথা এগিয়ে চলছে। সেইসঙ্গে ছাগল দিতে তার কতদিন লাগবে এবং কত দাম পড়বে। এসব কথোপকথনের মাঝে এবার যা শুনলাম তাতে একেবারে হতভম্ব হয়ে গেলাম। বাঘজরিপের জন্য ৫০টি নয় প্রথম ধাপে ২০০টি ছাগল সংগ্রহ করেছে বনবিভাগ।

আলতাফ বলে চললো, বড় স্যার মানে বিভাগীয় কর্মকর্তা জাহেদুল কবিরের নির্দেশে কয়েক দফায় ছাগল কেনা হয়েছিল। কোনওটা ২২০০ আবার কোনওটা ২৫০০ টাকা করে পড়েছিল। আমরা তো প্রায় শ দুয়েক ছাগল কিনেছিলাম। প্রতিবার ৫০টি করে ছাগল কেনা হয়েছে। একজন ফরেস্ট রেঞ্জারের বাড়ি খুলনায় তার গ্রাম থেকে কেনা হয়েছে। সরকারি জিনিস তাই সব কাগজপত্র দিয়ে কেনা হয়েছে। তবে যে যার লাভ করে নিয়ে এরপর সরকারি দাম দেওয়া হয়েছে। ছাগল কিনে এরপর ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, ছাগলে যদি কোনও জীবাণু থাকে। জীবাণু থাকলে তো বাঘ মারা যেতে পারে। ছাগল দিয়ে কী করলো? এমন প্রশ্নের উত্তরে আলতাফ বলল, ছাগল বাঘের সামনে দেওয়া হয়েছিল, এরপর সেখানে সিসি ক্যামেরা লাগানো ছিল। তারপর বাঘ আসতো এবং ছবি তোলা হতো। এরপর ছাগলগুলোর কী হতো? এই প্রশ্নের উত্তরে সে বলে- বাঘ সব ছাগল খাইয়া চলে যাইতো। কোনও ছাগল আর ফিরে আসেনি।

বনকর্তার মুখোমুখি: মিথ্যাচার ও টালবাহানা
আলতাফের সঙ্গে আলোচনার পর এবার মুখোমুখি বিভাগীয় বনকর্তা জাহিদুল কবিরের কাছে। তার সঙ্গে আগে কোথাও দেখা হয়নি তবে টিভি ও পত্রিকার কল্যাণে আমাকে চিনে নিলেন।
প্রশ্ন: আপনি বাঘজরিপে কেনও ছাগলকে টোপ বানিয়েছেন?
উত্তর: এমন বাজারি তথ্য আপনারা কোথায় পান? কেউ বললো আর সব হয়ে গেলো?
প্রশ্ন: এই ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন ?
উত্তর: হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়েন
প্রশ্ন: আপনারা বাঘজরিপের জন্য প্রথম ধাপেই অনৈতিকভাবে ২০০টি ছাগল সুন্দরবনে প্রবেশ করিয়েছেন।
এরপর তিনি পুরোটাই অস্বীকার করে আমাকে আবারও অনেক কিছু বোঝানো শুরু করলেন।
ওনার সঙ্গে কথা বলে মনে হলো, আমাদের আসলে প্রমাণ দরকার। এই প্রমাণ যোগাড় করতে প্রয়োজন নৌকা চালককে। তাকে পেলে জানা যাবে কীভাবে বাঘের সামনে ছাগলকে টোপ বানিয়ে রেখেছিল।
পুরো দুদিন সন্ধানের পর লিটন নামের নৌকাচালককে অবশেষে পেলাম মংলার মামা ঘাট নামক মংলাই নদীর তীরে। বাঘজরিপের প্রথম পর্বের সঙ্গে জড়িত ছিল লিটন ।

লিটনের মুখোমুখি: বাঘের সামনে ছাগল দেওয়ার গল্প
কীভাবে বাঘজরিপ হলো ? শুনেছি ২০০ ছাগল ব্যবহার করা হয়েছে এই বাঘজরিপে।
তার উত্তরে জানা যায়, প্রথমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে আজাদ কবির নামে এক ব্যক্তি।
তিনি সুন্দরবনের করমজলের স্টেশনের ফরেস্টার ছিলেন। তার সঙ্গে লিটনের বোট ভাড়ার একটি চুক্তিপত্র হলো। পরে চূড়ান্ত হয় খুলনা বন্যপ্রাণী সার্কেলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জাহেদুল কবিরের মাধ্যমে। তার কাছে ৮টি বোট ভাড়া নেন, পরে তা আবার পরিবর্তন করে দুটি সাম্পান ও দুটি জালি বোট ভাড়া নেন। ২০১৩ সালের ১ নভেম্বরে বোট নেমে গেল বনের নোনা জলে।

ছাগল বহন করার জন্য মাসখানেকের জন্য নেওয়া হয়েছিল একটি ছোট জালিবোট। এরপর সেই ছাগলের বোট বিদায় দিয়ে পরে নিজেদের থাকার জালি বোটেই ছাগল আনা নেওয়া করা হতো।
বাঘের মুখে থেকে কাজ করতে হয়েছে তাদের। ডাঙায় নেমে জঙ্গল সাফ করে সেখানে জাল পাতাসহ ক্যামেরা পাতাসহ অনেক ঝুঁকির কাজ করতে হয়েছে। প্রথম দিকে ৩৬/৩৭ জনের মতো কাজ করেছে, পরে আস্তে আস্তে কমিয়ে ২০/২২ জনের কর্মীবাহিনী তৈরি করা হয়। দুটো গ্রুপ হয়ে যায়, একদলে সাত/আট জন সুন্দরবনের কচিখালি, আরেক দল কটকা নামক জায়গায় অবস্থান নেয়। অপর দলেও ছিল ৮/১০জন।

দুই বা দেড় কি.মি. দূরে মাথায় মাথায় ছিল ক্যামেরা। এটা তো জিপিএস এর মাধ্যমে মাপা হতো। প্রায় এক কাঠা জায়গার মতো পুরো জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে ফেলা হতো। বাঘ যেদিক থেকে আসবে এমন ধারণার ওপর দুটো লাঠি কেটে দু’পাশে রেখে ক্যামেরা লাগিয়ে দেওয়া হতো। বাঘ যেদিক দিয়ে আসবে সেদিক দিয়ে ছবি উঠবে। আর মাঝখানে একটি খুঁটিতে একটা ছাগল বাঁধা থাকতো। পরে ছাগল নেতাইলে (চিৎকার) বাঘ চলে আসতো।

বাঘ আজকে না কালকে, কালকে না হলে পরশু চলে আসতো। প্রতি তিনদিন পর পর পরীক্ষা করা হতো। দেখা হতো নির্দিষ্ট জায়গায় বাঘ আসছে কি না। ছাগলের খাবার আছে কি না বা ছাগলটা বাঘ খেয়ে গেছে কি না।

বাঘ অনেক সময় সেখানে বসেই খেত আবার অনেক সময় ছাগল নিয়ে চলে যেত। অনেক সময় যেখানে ছাগল বাঁধা থাকতো সেখান থেকে ছাগল নিয়ে আরেক জায়গায় নিতো যেখানে ক্যামেরার আড়াল হয়ে যেত। এমন অনেক দৃশ্য লিটন দেখেছে- মা তার বাচ্চা নিয়ে আসতো পরে তারা সে ছাগল নিয়ে আধাঘণ্টা পৌনে এক ঘণ্টা খেলা করতো।

ছাগল ছিল অনেক। পর্যাপ্ত ছাগল আনা হয়েছিল চার পিকআপে করে। লিটন এও জানায়, সে কাজ করার সময় অনেক সাংবাদিক তাকে ফোন দেয়। কিন্তু এ বিষয়ে সে কাউকেই কিছু বলেনি। কারণ তাদের এ বিষয়ে তথ্য দিতে মানা করা হয়েছিল।

বনকর্তা আবারও: বাঘের বাড়িতে বাঘেরই সর্বনাশ
খুলনা কয়রা বন অফিসে আবারও বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জাহিদুল কবিরের মুখোমুখি। এবার আমি খুব শক্ত অবস্থানে, কারণ এবার আমার সব সত্যতা জানা আছে। প্রশ্ন করতেই তিনি আমাকে থামিয়ে দিলেন বরং তিনি কিছু বলতে এগিয়ে এলেন টেবিলের ওপার থেকে মাথা বাড়িয়ে দিলেন।
জাহেদুল কবির যা বললেন-
টোপ দিয়ে বাঘজরিপের বিষয়টি বিশ্বব্যাংকের একটি মনিটরিং দল জানতে পারে। পরে তারা এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করতে বলেন। কিন্তু টোপ না দিলে যে বাঘ আসবে না তা তো বনকর্তারা জানতেন আগে থেকে।
তবে আর যাইহোক, আমাদের শিখতে হবে তা না হলে আমরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকবো।
প্রশ্ন করলাম, লাইভ বেটিং (জীবন্ত টোপ) করা কেমন হয়ে গেল না ?
উত্তর: না, বিষয়টি আমাদের হাতে নাই। সুন্দরবন ওয়েস্ট বেঙ্গল যেমন করে বলছে আমারা সেভাবে করছি।
প্রশ্ন: যদিও আকর্ষিক গন্ধজাতীয় ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে, সেটা বলতে আপনারা কী বলতে চান? এবং সত্যি কি কোথাও ছাগল দিয়ে বাঘের টোপ বানাননি?
উত্তর: হ্যাঁ বানিয়েছি, তবে খুব অল্প পরিসরে বানিয়েছি। আমাদের তো মোট তিনটা ব্লক। পুরো সুন্দরবন তো আর করিনি।

ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া, ওরা তো ২০১০ সালে করেছিল। ওরা কিছু পায়নি, দুই একটি পার্গ মার্ক পাচ্ছে একটা দু্টা ক্যাপচার পাচ্ছে। এরপর পরে তারা চিন্তা করে দেখেছে, এভাবে সম্ভব না তাই তারা অল ফাক্টরি ক্লু পেতে এটট্রাকটেন্ট ব্যবহার করেছে পরে সবাই মিলে এটা করেছি।
এটা উপর মহলের নির্দেশে হয়েছে। এটা ছাড়া আপনি কোনও ক্যাপচারও পাবেন না। ওয়াইল্ড লাইফ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া আমাদের কাছে কোনও পেমেন্ট নেয় না, ওরা আমাদের সহযোগিতা করে।
এভাবেই আমাদের সামনে উঠে আসে কীভাবে বাঘ গুনতে গিয়ে বনকর্মকর্তারা বাঘের সর্বনাশ করেছেন। যে বাঘ আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে, পরিবেশ টিকিয়ে রেখে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। সেদিকে তাদের কোনও চিন্তার খোরাকই পাওয়া গেল না।

লেখক: পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী বিষয়ক সাংবাদিক
hossainsohel@gmail.com